সাইকেল ভ্রমন ও স্মৃতিময় একটি রাত

 ভোগাই ব্রীজে যখন উঠলাম তখন সন্ধ্যা হবে হবে করছে...ভোগাই নদীটা আসলেই সুন্দর...অদূরেই ভারতের তুরা শহরের গারো পাহাড়ে এই নদীর উৎপত্তি...


হাতে সময় নেই তাই আবার যাত্রা শুরু করলাম...পথে একটা দোকানে থামলাম...থামার অবশ্য বিশেষ একটা কারণ ছিল...এর আগেরবার যখন এই রোডে এসেছিলাম তখন এই দোকানে চা খেয়েছিলাম...দোকানটা একটা মহিলা চালান...ওনার বাবার বাড়ি ছিল নোয়াখালী...দেখেই মহিলা আমায় চিনতে পারলেন... মাসের ব্যবধানে উনি আবার আমায় দেখতে পাবেন এইটা কল্পনা করেননি...ওখানে চা খেয়ে আবার পথ চলা শুরু করলাম...একটু পরেই রাতের আঁধার নেমে এল...একটা হেডলাইট নিয়ে দুজন পথ চলতে লাগলাম...



হাতের বাম পাশেই ভারত সীমান্ত...রাস্তা কোথাও কাঁচা আবার কোথাও পাকা....চলতে চলতে আশ্রয় খুঁজছিলাম...যদিও সাথে তাবু ছিল তবুও বর্ডার এলাকায় তাবু টানানোর মত নিরাপদ জায়গা খুঁজে পেলাম না...পথে একটা বিজিবি ক্যাম্পে থামলাম...রাতে তাবু টানানোর জন্য একটু জায়গা চাইলাম...কিন্তু উনারা না করে দিলেন...বাধ্য হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে থাকলাম...






পথে একটা বাজারে থেমে বাজারের একজন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে আমাদের সমস্যার কথা খুলে বলে একটু আশ্রয় চাইলাম...উনি আমাদের অনেক প্রশ্ন করলেন...পরে উনাকে উনাদের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে আমার তোলা একটা ছবি প্রত্যয়নপত্র দেখাই...আমার কলেজ আইডি দেখাই...তারপর উনি নিশ্চিত হয়ে আমাদের স্থানীয় স্কুলের একটা বড় রুমে থাকতে দেন...ওখানে কিছু শ্রমিক ছিল...নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো ভেবে থাকতে রাজি হই...কিন্তু একটু পর মুরব্বি নিজেই বলেন যে আমাদের এখানে থাকা ঠিক হবেনা...আমাদেরকে বাজারের পাশে মক্তবে থাকতে বলেন...আমরা রাজি হয়ে যাই...কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মক্তবে বিদ্যুৎ ছিলনা...তারপর নিরাপদ ভেবে আমরা ওখানে থাকতে রাজি হয়ে যাই...সাইকেলগুলো ভেতরে রেখে খাবারের খোঁজে আসার সময় দেখি দরজায় তালা নেই...পরে সাইকেলের তালা এনে দরজায় লাগাই...বাজারে এসে শুনি এখানে ভাত পাওয়া যায়না...পরে এক দোকানদারকে ধরে কিছু পরোটা বানানোর ব্যবস্থা করি...সাথে ডিম ভাজি...উনার এসব করতে একটু সময় লাগবে তাই আমরা অন্য দোকানে বসে ফোন চার্জ দিয়ে খেলা দেখতে লাগলাম...








কটা জিনিস দেখে অবাক লাগলো যে এখানে প্রতি ওভারেই বাজি ধরা হয়... ওভারে কত রান হবে ঐটার উপর বাজি চলে...মজাই লাগলো তাদের এই বাজি হারা জেতার খেলা দেখে পরোটা বানানো হয়ে গেলে দোকানদার আমাদের ডাক দেয়...খেয়ে আমরা শুতে চলে গেলাম...মক্তবে বসার জন্য রাখা চট বিছিয়ে আমরা শুয়ে পড়লাম...ব্যাগটা মাথার নিচে দিলাম...শোয়ার সাথে সাথেই ঘুম...গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গার পর আবিষ্কার করি খুব ঠান্ডা...বর্ডার এলাকায় এরকম শীত থাকতে পারে কল্পনা করিনি...আমরা যেখানে ছিলাম ওখান থেকে একটু দূরেই ভারতের মেঘালয় রাজ্য....মেঘালয়ের সব শীত সম্ভবত এখানে চলে আসছে...সাথে গরম কাপড় ছিলনা...কিছু না পেয়ে মক্তবের সেই ধুলো বালি মাখা চট গায়ে জড়ালাম...মাথাটা শুধু গামছা মুড়ি দিয়ে রাখলাম...তারপর শীতের তীব্রতা ভালোভাবেই টের পেলাম...শেষ রাতে ঠান্ডায় অনেকবার ঘুম ভাঙ্গছে...পরে আর ঘুমাইনি...






ফজরের নামাজ পড়ে প্যাডেল শুরু করলাম বিরিশিরির উদ্দেশ্যে...সেই রাতটা আজো স্মরণীয় হয়ে আছে মনের মধ্যে...ধুলোবালি মাখা একটা চট গায়ে দিয়ে একটা রাত পার করা...সাইকেল না থাকলে এই অভিজ্ঞতাটা হয়তো কোনদিন হতোনা 

ছবিঃ আরিফুল ইসলাম আসিব

আরো ছবিসহ পুরো আলব্যাম দেখতে ক্লিক করুনঃ  সাইকেলে দেশ দেখি

 

Post a Comment

0 Comments